XtGem Forum catalog
HomeBlogAbout me

[>>] মেজদিদি (পর্ব-৯)

ja.g
তিন টাকা আদায় করে নিয়ে পালিয়েছিল, সব খরচ করে এই আসচে। হেমাঙ্গিনী বিশ্বাস করিলেন 'না। বলিলেন, কে বললে, সেটাকা আদায় করেছিল? লক্ষ্মণ গয়লা নিজে এসে বলে গেছে, বলিয়া ললিত পড়িতে চলিয়া গেল। ঘন্টা দুই-তিন আর কোন গোলযোগ শোনা গেল না। বেলা দশটার সময় রাঁধুনী খান-কতকরুটি দিয়া গিয়াছিল, হেমাঙ্গিনী বসিবার উদ্যোগ করিতেছিলেন, এমনি সময় তাঁহারই ঘরের বাহিরে কুরুক্ষেত্র বাধিয়া গেল। বড়গিন্নীর পশ্চাতে পাঁচুগোপাল কেষ্টর কান ধরিয়া হিড়হিড় করিয়া টানিয়া আনিতেছে, সঙ্গে বড়কর্তাও আছেন। মেজকর্তাকেও আনিবার জন্য দোকনে লোক পাঠানহইয়াছে। হেমাঙ্গিনী শশব্যস্তে মাথায় কাপড় দিয়াঘরের একপার্শ্বে সরিয়া দাঁড়াইতেই বড়কর্তা তীব্র কটুকন্ঠে শুরু করিয়া দিলেন, তোমার জন্যে আর ত আমরা বাড়িতে টিকতে পারিনে মেজবৌমা। বিপিনকে বল, আমাদের বাড়ির দামটা ফেলে দিক, আমরা আর কোথাও উঠে যাই। হেমাঙ্গিনী বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া নিঃশব্দে দাঁড়ইয়া রহিলেন। তখন বড়গিন্নী যুদ্ধপরিচালনার ভার স্বহস্তে গ্রহণ করিয়া দ্বারের ঠিক সুমুখে সরিয়া আসিয়া, হাত-মুখ নাড়িয়া বলিলেন, মেজবৌ, আমি বড়-জা,তা আমাকেও কুকর-শিয়াল মনে করতা ভালই কর, কিন্তু হাজার দিন বলেচি, মিছে লোক-দেখান আহ্লাদ দিয়ে, আমার ভায়ের মাথাটি খেয়ো নাকেমন এখন ঘটলত? ওগো, দু'দিন সোহাগ করা সহজ়, কিন্তু চিরকালের ভারটি ত তুমি নেবে নাসে ত আমাকেই সইতে হবে? ইহা যে কটুক্তি এবং আক্রমণ তাহাই শুধু হেমাঙ্গিনী বুঝিলআর কিছু নয়। মৃদুকন্ঠে জিজ্ঞাসা করিলেন, কি হয়েচে? কাদম্বিনী আরো বেশী হাত-মুখ নাড়িয়া কহিলেন, বেশ হয়েচেখুব চমৎকার হয়েছে। তোমার শেখানোর গুণে আদায়ী টাকাচুরি করতে শিখেচেআর দু'দিন কাছে ডেকে আরো দুটো শলাপরামর্শ দাও,তা হলে সিন্দুক ভাঙ্গতে, সিঁদ কাটতেও শিখবে। একে হেমাঙ্গিনী পীড়িত, তাহার উপর এই কদর্য বিদ্রূপ ও মিথ্যা অভিযোগআজ সে জ্ঞান হারাইল। ইতিপূর্বে কখনও কোন কারণে ভাশুরের সুমুখে কথা কহে নাই; কিন্তু আজ আর থাকিতেপারিল না। মৃদুকন্ঠে কহিল,আমি কি তাকে চুরি-ডাকাতি করতে শিখিয়ে দিয়েছি দিদি? কাদম্বিনী স্বচ্ছন্দে বলিলেন, কেমন করে জানব, কি তুমি শিখিয়ে দিয়েচ, না দিয়েচ। এ স্বভাবতার ত আগে ছিল না,এখনই বা হ'ল কেন? এত লুকোচুরির কথাবার্তাই বা তোমাদের কি, আর এত আহ্লাদ দেওয়াই বা কি জন্যে? কতদিনের পুঞ্জীভূত আবদ্ধ বিদ্বেষরাশি যে এই একটু পথ পাইয়া বাহির হইয়া আসিল, তাহা যিনি সব দেখেন, তিনি দেখিতে পাইলেন। মুহূর্তকালের জন্য হেমাঙ্গিনী হতজ্ঞানের মত স্তম্ভিত হইয়া রহিল। এমন নিষ্ঠুর আঘাত, এত বড় নির্লজ্জ অপমান, মানুষ মানুষকে যে করিতে পারে, ইহা যেন তাহার মাথায়প্রবেশ করিল না।কিন্তু ঐ মুহূর্তকালের জন্য। পরক্ষনেই সে মর্মান্তিক আহত সিংহীর মত দুই চোখে আগুন জ্বালিয়া বাহির হইয়া আসিল। ভাশুরকে সুমুখে দেখিয়া মাথায় কাপড় আর একটু টানিয়া দিল, কিন্তু রাগ সামলাইতে পারিল না। বড়-জাকে সম্বোধন করিয়া মৃদু অথচ কঠোরস্বরে বলিল,তুমি এতবড় চামারযে, তোমার সঙ্গে কথা কইতেও আমার ঘৃণা বোধ হয়। তুমি এতবড় বেহায়া মেয়েমানুষ যে, ঐ ছোঁড়াটাকে ভাই বলেও পরিচয় দিচ্চ। মানুষ জানোয়ার পুষলে তাকেও পেট ভরে খেতে দেয়, কিন্তু ঐ হতভাগাটাকে দিয়ে যত-রকমের ছোট কাজ করিয়ে নিয়েও তোমরা আজ পর্যন্ত একদিন পেট ভরে খেতে দাও না। আমি না থাকলে এতদিন ও না খেতে পেয়েই মরে যেত। ও পেটের জ্বালায় শুধু ছুটে আসে আমার কাছে, সোহাগ-আহ্লাদ করতে আসে না। বড়-জা বলিলেন, আমরা খেতে দিইনে, শুধু খাটিয়ে নিই, আর তুমি ওকে খেতে দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেচ? হেমাঙ্গিনী জবাব দিল, ঠিক তাই। আজ পর্যন্তকখনও ওকে দু'বেলা তোমরা খেতে দাওনিকেবল মারধর করেচ, আর যত পেরেচ খাটিয়েনিয়েচ। তোমার ভয়ে আমি হাজার দিন ওকে আসতে বারণ করেচি, কিন্তু খিদে বরদাস্ত করতে পারে না, আর আমার কাছে পেট ভরে দুটো খেতে পায় বলেই ছুটে ছুটে আসেচুরি-ডাকাতির পরামর্শ নিতে আসে না। কিন্তু তোমরা এতবড় হিংসুক যে, তাও চোখে দেখতে পার না। এবার ভাশুর জবাবদিলেন। কেষ্টকে সুমুখে টানিয়া আনিয়া তাহার কোঁচার খুঁট খুলিয়া একটা কলাপাতার ঠোঙ্গা বাহির করিয়া সক্রোধে বলিয়া উঠিলেন, হিংসুক আমরা! কেন যে ওরে ভাল চোখে দেখতে পারিনে, তা তুমি নিজেরচোখে দ্যাখো। মেজবৌমা, তোমার শেখানর গুণেই ও আমার টাকা চুরি ক'রে তোমার ভালোর জন্যে কোন্‌ একটা ঠাকুরের পূজো দিয়ে প্রসাদ এনেচেএই নাও; বলিয়া তিনি গোটা-দুই সন্দেশও ফুল বেলপাতা ঠোঙ্গার ভিতর হইতে বাহির করিয়া দেখাইলেন। কাদম্বিনী চোখ কপালে তুলিয়া বলিলেন, মা গো! কিমিটমিটে শয়তান, কি ধড়িবাজ ছেলে! বেশ ত মেজবৌ, এখন তুমি বল না, কি মতলবে ও চুরি করেচে? ও কি আমারভালোর জন্যে? হেমাঙ্গিনী ক্রোধে জ্ঞান হারাইল। একে তাহার অসুস্থ শরীর, তাহাতে এই সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ, সে দ্রুতপদে কেষ্টর সম্মুখীন হইয়া তাহার দুই গালে সশব্দে চড় কষাইয়া দিয়া কহিল, বদমাইস চোর, আমি তোকে চুরি করতে শিখিয়ে দিয়েচি? কতদিন তোকে আমারবাড়ি ঢুকতে বারণকরেচি, কতবার তোকে তাড়িয়ে দিয়েচি। আমার নিশ্চয় বোধ হচ্চে, তুই চুরির মতলবেই যখন তখন এসে উঁকি মেরে দেখতিস। ইতিপূর্বেই বাড়ির সকলে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিল। শিবু কহিল, আমি নিজের চক্ষে দেখেছি মা, পরশু রাত্তিরে ও তোমার ঘরের সুমুখে আঁধারে দাঁড়িয়েছিল, আমাকে দেখেই ছুটে পালিয়ে গেল। আমি এসে না পড়লে নিশ্চয় তোমার ঘরে ঢুকে চুরি করত। পাঁচুগোপাল বলিল, জানে মেজখুড়ীমার অসুখ শরীরসন্ধ্যা হলেই ঘুমিয়ে পড়েনও কি কম চালাক! মেজবৌয়ের কেষ্টর প্রতি আজকার ব্যবহারে কাদম্বিনী যেরূপ প্রসন্ন হইলেন, এই ষোল বৎসরের মধ্যে কখনও এরূপ হন নাই। অত্যন্ত খুশি হইয়া কহিলেন, ভিজে বেড়াল! কেমন করে জানবো মেজবৌ, তুমি ওকে বাড়ি ঢুকতে বারণ করেচ। ও বলে বেড়ায়, মেজদি আমাকে মায়ের চেয়ে ভালবাসে। ঠোঙ্গাসুদ্ধ নির্মাল্য টান মারিয়া ফেলিয়া দিয়া বলিলেন, টাকা তিনটে চুরিকরে কোথা থেকে দুটো ফুলটুল কুড়িয়ে এনেচে। বাড়ি লইয়া গিয়া বড়কর্তা চোরের শাস্তি শুরু করিলেন। সে কি নির্দয় প্রহার! কেষ্ট কথাও কহে না, কাঁদেও না। এদিকে মারিলে ওদিকে মুখ ফিরায়, ওদিকে মারিলে এদিকে মুখ ফিরায়। ভারীগাড়িসুদ্ধ গরু
Back to posts