Disneyland 1972 Love the old s
HomeBlogAbout me

[>>] মেজদিদি (পর্ব-৭)

j
মরে যাই, কি করিস তুই? খুব কাঁদিস? যাঃসেরে যাবে, বলিয়া ললিত মায়ের বুকের উপরএকটা হাত রাখিল।মা ছেলের হাতখানি হাতে লইয়া চুপ করিয়া রহিলেন। জ্বরের উপর এই স্পর্শ তাহার সর্বাঙ্গ জুড়াইয়া দিতে লাগিল। ইচ্ছা করিতে লাগিল, এমন করিয়া বহুক্ষণ কাটান। কিন্তু একটু পরেই ললিত উসখুসকরিতে লাগিল, পুতুল নাচ হয়ত এতক্ষণে শুরু হইয়া গিয়াছে মনেকরিয়, ভিতরে ভিতরে তাহার চিত্ত অস্থির হইয়া উঠিল। ছেলের মনের কথা বুঝিতে পারিয়া মা মনে মনে হাসিয়া বলিলেন, আচ্ছা যা, দেখে আয়, বেশী রাত করিস নে যেন। না মা, এক্ষুণি ফিরে আসব, বলিয়া ললিত ঘরের বাহিরহইয়া গেল। কিন্তু মিনিট-দুই পরে ফিরিয়া আসিয়া বলিল, মা একটা কথা বলব? মা হাসিমুখে বলিলেন, একটা টাকা চাই ত? ঐ কুলুঙ্গিতে আছে,নিগেদেখিস, বেশি নিসনে যেন। না মা, টাকা চাইনে। বলি, তুমি শুনবে! মা বিস্ময় প্রকাশ করিয়া বলিলেন, টাকা চাইনে? তবে কি কথা রে? ললিত আর একটু কাছে আসিয়া চুপিচুপি বলিল, কেষ্টমামাকে একবার আসতে দেবে? ঘরে ঢুকবে নাঐ দোরগোড়া থেকে একটিবার তোমাকে দেখেই চলে যাবে।কালকেও বাইরে এসে বসেছিল, আজকেও এসে বসে আছে। হেমাঙ্গেনী ব্যস্ত হইয়া উঠিয়া বসিলেন, বলিলেনযা যা ললিত, এক্ষুণি ডেকে নিয়ে আয়আহা হা, বসে আছে, তোরা কেউ আমাকে জানাস নি রে? ভয়ে আস্তে চায় না যে, বলিয়া ললিত চলিয়া গেল।মিনিট-খানেক পরেকেষ্ট ঘরে ঢুকিয়া মাটির দিকে ঘাড় বাঁকাইয়া দেয়ালে ঠেস দিয়াদাঁড়াইল। হেমাঙ্গিনী ডাকিলেন, এস দাদা, এস। কেষ্ট তেমনিভাবে স্থির হইয়া রহিল। তিনি নিজেতখন উঠিয়া আসিয়াকেষ্টর হাত ধরিয়া বিছানায় লইয়া গেলেন। পিঠে হাতবুলাইয়া দিয়া বলিলেন, হাঁ রে কেষ্ট, বকেছিলুমবলে তোর মেজদিদিকে ভুলে গেছিস বুঝি? সহসা কেষ্ট ফুঁপাইয়া কাঁদিয়া উঠিল। হেমাঙ্গিনী কিছু আশ্চর্য হইলেন, কারণ, কখনও কেহ তাহাকেকাঁদিতে দেখে নাই। অনেক দুঃখ-কষ্ট যাতনাদিলেও সে ঘাড় হেঁট করিয়া নিঃশব্দে থাকে, লোকজনের সুমুখে জল ফেলে না। তাহার এই স্বভাবটি হেমাঙ্গিনী জানিতেন বলিয়াই বড় আশ্চর্য হইয়াবলিলেন, ছি, কান্না কিসের? বেটাছেলেকে চোখের জল ফেলতে আছে কি? প্রত্যুত্তরে কেষ্ট কোঁচার খুঁট মুখে গুঁজিয়া প্রাণপণ চেষ্টায় কান্না রোধ করিতে করিতেবলিল, ডাক্তার বলে যে, বুকে সর্দি বসেচে? হেমাঙ্গিনী হাসিলেনএইজন্যে? ছি ছি! কি ছেলেমানুষ তুই রে! বলিতে বলিতে তাহার নিজের চোখদিয়াও টপটপ করিয়া দু-ফোঁটা জল গড়াইয়া পড়িল।বাঁ-হাত দিয়া মুছিয়া ফেলিয়া তাহার মাথায় একটা হাত দিয়া কৌতুক করিয়া বলিলেন, সর্দি বসেচেবসলেই বা রে! যদি মরি, তুই আর ললিত কাঁধে করে গঙ্গায় দিয়েআসবিকেমন, পারবি নে? বলি মেজবৌ, কেমন আছ আজ? বলিয়া বড়বৌ দোরগোড়ায় আসিয়া দাঁড়াইলেন। ক্ষণকাল কেষ্টর পানে তীক্ষ্ণ-দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকিয়া বলিলেন, এই যে ইনি এসে হাজির হয়েছেন। আবার ও কি? মেজগিন্নীর কাছে কেঁদে সোহাগ করা হচ্ছেযে! ন্যাকা আমার, কত ফন্দিই জানে! ক্লান্তিবশতঃ হেমাঙ্গিনী এইমাত্র বালিশে হেলান দিয়া কাত হইয়া পড়িয়াছিলেন, তীরের মত সোজা উঠিয়া বসিয়া কহিলেন, দিদি, আমার ছ-সাতদিন জ্বর, তোমার পায়ে পড়ি, আজ তুমি যাও। কাদম্বিনী প্রথমটা থতমত খাইয়া গেলেন। কিন্তু পরক্ষণে সামলাইয়া লইয়া বলিলেন, তোমাকে ত বলিনি মেজবৌ। নিজের ভাইকে শাসন কচ্ছি, তুমি এমন মারমুখী হয়ে উঠচকেন? হেমাঙ্গিনী বলিল, শাসন ত রাত্রিদিনই চলচেবাড়ি গিয়ে করো, এখানে আমার সামনে করবার দরকার নেই, করতেও দেব না। কেন, তুমি কি বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে না কি? হেমাঙ্গিনী হাতজোড় করিয়া বলিল, আমার বড় অসুখ দিদি, তোমার দুটি পায়েপড়ি, হয় চুপ করনয় যাও। কাদম্বিনী বলিলেন, নিজের ভাইকে শাসন করতেপাব না? হেমাঙ্গিনী জবাব দিল, বাড়ি গিয়ে কর গে। সে আজ ভাল করেই হবে। আমার নামে লাগান-ভাঙান আজ বার করববজ্জাত মিথ্যুক কোথাকার! বললুম গরুর দড়ি নেই কেষ্ট,দু-আঁটি পাট কেটে দে,না দিদি, তোমার পায়ে পড়ি, পুতুলনাচ দেখে আসিএই বুঝি পুতুলের নাচ হচ্চে রে? বলিয়া কাদম্বিনী গুমগুম করিয়া পাফেলিয়া চলিয়া গেলেন। হেমাঙ্গিনী কতক্ষণ কাঠের মতবসিয়া থাকিয়া শুইয়া পড়িয়া বলিল, কেন তুই পুতুলনাচ দেখতে গেলিনি কেষ্ট? গেলে ত আর এইসব হ'ত না। আসতে যখন তোকে ওরা দেয় না ভাই, তখন আর অসিস নে আমার কাছে। কেষ্ট আর কথাটি না কহিয়া আস্তে আস্তে চলিয়া গেল। কিন্তু তৎক্ষণাৎ ফিরিয়া আসিয়া বলিল, আমাদের গাঁয়ের বিশালাক্ষী ঠাকুর বড় জাগ্রতমেজদি, পূজো দিলে অসুখ সেরে যায়। দাও না মেজদি! এইমাত্র নিরর্থক ঝগড়া হইয়া যাওয়ায় হেমাঙ্গিনীর মনটা ভারী বিগড়াইয়া গিয়াছিল, ঝগড়াঝাঁটি ত হয়ইসেজন্যও নয়। এমন একটা রসাল ছুতা পাইয়াএই হতভাগার দুর্দশা যে কিরূপ হইবে, আসলে সেই কথাটা মনে মনে তোলাপাড়া করিয়া তাহার বুকের ভিতরটা ক্ষোভে ও নিরুপায় আক্রোশে জ্বলিয়া উঠিয়াছিল। কেষ্ট ফিরিয়া আসিতেই হেমাঙ্গিনী উঠিয়া বসিল এবং কাছে বসাইয়া গায়ে হাত বুলাইয়া দিয়া কাঁদিয়া ফেলিল। চোখ মুছিয়া বলিল, আমি ভাল হয়ে তোকে লুকিয়েপূজো দিতে পাঠিয়ে দেব। পারবি একলা যেতে? কেষ্ট উৎসাহে দুই চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া বলিল, একলা যেতে খুব পারব। তুমি আজকেআমাকে একটা টাকাদিয়ে পাঠিয়ে দাওনা, মেজদিআমি কাল সকালেই পূজোদিয়ে তোমাকে প্রসাদ এনে দেব।সে খেলে তক্ষুণিঅসুখ সেরে যাবে! দাও না মেজদি আজকেই পাঠিয়ে। হেমাঙ্গিনী দেখিলেন, তাহার আর সবুর সয় না। বলিলেন, কিন্তু কাল ফিরে এলে তোকে যে এরা ভারী মারবে! মারধরের কথা শুনিয়া প্রথমটা কেষ্ট দমিয়া গেল, কিন্তু পরক্ষণেই প্রফুল্ল হইয়া কহিল, মারুক গে। তোমার অসুখ সেরে যাবে ত। আবার তাঁহার চোখদিয়া জল গড়াইয়া পড়িল। বলিলেন, হ্যাঁ রে কেষ্ট, আমি তোর কেউ নই, তবে আমার জন্যে তোর এত মাথাব্যথা কেন? এ প্রশ্নের উত্তর কেষ্ট কোথায় পাইবে? সে কি করিয়া বুঝাইবে, তাহার পীড়িত আর্ত হৃদয়দিবারাত্র কাঁদিয়া কাঁদিয়া তাহার মাকে খুঁজিয়া ফিরিতেছে। একটুখানি মুখপানে চাহিয়া থাকিয়া বলিল, তোমার অসুখ যে সারচে না মেজদিবুকে সর্দি বসেচে যে! হেমাঙ্গিনী এবার একটুখানি হাসিয়া বলিলেন, আমার সর্দি বসেচে তাতে তোরকি? তোর এত ভাবনাহয়কেন? কেষ্ট আশ্চর্য হইয়া বলিল, ভাবনা হবে না মেজদি, বুকে সর্দি বসা যে বড়
Back to posts